ট্রেনের টিকিট কাটার সহজ নিয়ম: বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেমের সম্পূর্ণ গাইড

ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য ট্রেন যাত্রা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কেনা নিয়ে অনেকের মধ্যেই একধরনের অনীহা বা জটিলতা কাজ করে। ভিড়ের মধ্যে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা, সময় নষ্ট—এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেম

এখন ঘরে বসে, মোবাইল বা কম্পিউটারেই কয়েক ক্লিকে বুক করা যায় আপনার কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের টিকিট। কিভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক ট্রেনের ই-টিকিট কাটার সহজ ও সম্পূর্ণ নিয়ম।

ই-টিকিটিং কী এবং এর সুবিধাগুলো কী?

ই-টিকিটিং হলো অনলাইনে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে টিকিট কেনার একটি আধুনিক ব্যবস্থা। এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:

  • সুবিধাজনক: যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে টিকিট কাটা যায়

  • সময় সাশ্রয়: কাউন্টারের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না

  • নগদ লেনদেনহীনতা: ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে পেমেন্ট

  • সুরক্ষিত: টিকিট হারানোর বা নষ্ট হওয়ার ভয় নেই, মোবাইলেই সেভ করে রাখুন

  • সিট নিশ্চিততা: রিয়েল-টাইম সিটের Availability দেখা যায় এবং পছন্দমতো সিট বেছে নেওয়া যায়

ট্রেনের টিকিট কাটার ধাপে ধাপে নিয়ম

ধাপ ১: ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন

সবচেয়ে প্রথমে যেতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ই-টিকিটিং ওয়েবসাইটে:
https://eticket.railway.gov.bd

ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস খুবই সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব।

ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন (রেজিস্ট্রেশন)

  • প্রথমবার ব্যবহারকারীদের জন্য অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে

  • ‘রেজিস্ট্রেশন’ বা ‘সাইন আপ’ অপশনে ক্লিক করুন

  • আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন

  • মোবাইল নম্বরে একটি OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসবে, সেটি দিয়ে ভেরিফাই করুন

  • এবার আপনি লগ ইন করতে পারবেন

ধাপ ৩: যাত্রার তথ্য দিন

  • লগ ইন করার পর হোমপেজে আপনি ফর্ম পাবেন

  • উৎস স্টেশন: যেখান থেকে যাত্রা শুরু করবেন (যেমন: ঢাকা কমলাপুর)

  • গন্তব্য স্টেশন: যেখানে যাবেন (যেমন: চট্টগ্রাম)

  • যাত্রীর তারিখ: কত তারিখে যাবেন

  • ক্লাস: (যেমন: শোভন চেয়ার, শোভন, এসি সিট, এসি বার্থ ইত্যাদি)

  • প্রাপ্তবয়স্ক/শিশু যাত্রীর সংখ্যা সিলেক্ট করুন

  • সব তথ্য দিয়ে ‘খুঁজুন’ (Search) বাটনে ক্লিক করুন

ধাপ ৪: ট্রেন ও সিট নির্বাচন করুন

  • সিস্টেম আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উপলব্ধ সব ট্রেনের তালিকা দেখাবে

  • ট্রেনের নাম, ছাড়ার সময়, পৌঁছানোর সময় এবং ভাড়া দেখাবে

  • আপনার সুবিধামতো ট্রেন এবং কোচ (S / C / F / E ইত্যাদি) সিলেক্ট করুন

  • এরপর উপলব্ধ সিটগুলো দেখাবে। আপনি আপনার পছন্দের সিট (জানালার পাশে, aisle সিট ইত্যাদি) বেছে নিতে পারবেন

ধাপ ৫: যাত্রীর তথ্য দিন

  • এখন প্রত্যেক যাত্রীর সঠিক নামবয়সলিঙ্গ এবং জেন্ডার দিন

  • গুরুত্বপূর্ণ: নামটি অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ-এর সাথে মিলতে হবে। ভুল নামে টিকিট কেনা হলে বোর্ডিংয়ে সমস্যা হতে পারে

ধাপ ৬: পেমেন্ট সম্পন্ন করুন

  • যাত্রীর তথ্য দেয়ার পর পেমেন্ট পেজে যাবেন

  • পেমেন্ট অপশনগুলো হলো: ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড (Visa, Mastercard), রকেট, নগদ, বিকাশ ইত্যাদি

  • পছন্দের পেমেন্ট মাধ্যম সিলেক্ট করে নির্দেশিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন

  • পেমেন্ট সফল হলে একটি কনফার্মেশন মেসেজ এবং Transaction ID পাবেন

ধাপ ৭: টিকিট ডাউনলোড ও প্রিন্ট আউট নিন

  • পেমেন্ট সফল হওয়ার পরেই আপনার ই-টিকিটটি তৈরি হয়ে যাবে

  • এটি পিডিএফ (PDF) ফরম্যাটে ডাউনলোড করার অপশন পাবেন

  • অত্যন্ত জরুরি: এই টিকিটটি ডাউনলোড করে সেভ করে রাখুন এবং হার্ড কপি (প্রিন্ট আউট) করে নিন

  • টিকিটে একটি অনন্য PNR নম্বর এবং একটি বারকোড/QR কোড থাকবে

যাত্রার দিন কি করতে হবে?

  • ট্রেনে ওঠার সময় প্রিন্টকৃত টিকিটের কপি এবং যাত্রীর আসল জাতীয় পরিচয়পত্র (NID/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন সনদ) অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে

  • রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিকিট এবং আইডি কার্ড মিলিয়ে দেখে নেবেন

  • প্রিন্টার না থাকলে টিকিটের PDFটি মোবাইলে সেভ করে রাখুন (পাওয়ার ব্যাকআপ সহ) এবং আইডি কার্ড সঙ্গে রাখুন

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও সতর্কতা

  • সময়মতো বুকিং: জনপ্রিয় রুট ও উৎসবের সময় টিকিট দ্রুত ফুরিয়ে যায়, তাই আগে থেকে বুকিং করুন

  • আইডি Verification: নাম এবং আইডি নম্বর ভুলে গেলে টিকিট বাতিল হয়ে যেতে পারে

  • অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: শুধুমাত্র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (eticket.railway.gov.bd) ব্যবহার করুন। অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কিনলে প্রতারণার শিকার হতে পারেন

  • PNR Number: আপনার PNR নম্বরটি সুরক্ষিত করে রাখুন। এর মাধ্যমে আপনি অনলাইনে টিকিটের অবস্থা check করতে পারেন বা যেকোনো সমস্যায় Helpline-এ দিতে পারেন

  • কাউন্টার থেকে টিকিট: যদি অনলাইনে সমস্যা হয়, তাহলে প্রচলিত পদ্ধতিতে কাউন্টার থেকেও টিকিট কিনতে পারেন

হেল্পলাইন

যেকোনো জটিলতা বা প্রশ্নের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

উপসংহার

ট্রেনের টিকিট কেনা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং সাশ্রয়ী। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আপনার ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক ও নিশ্চিন্ত করতে এই ই-টিকিটিং সিস্টেম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাহলে আর দেরি কেন? আজই পরিকল্পনা করুন আপনার পরবর্তী ট্রেন যাত্রার, এবং উপভোগ করুন ঝামেলামুক্ত টিকিট বুকিংয়ের সুবিধা

 

🔔 Don’t Forget:

NID ভেরিফাই না করলে টিকিট কাটতে পারবেন না। তাই রেজিস্ট্রেশনের সময় সঠিক তথ্য দিন এবং মোবাইল নম্বর সচল রাখুন।

শুভ যাত্রা!

Scroll to Top